www.kishoreganjnews.com

ডিমের হালি ১২ টাকা



[ নূর মোহাম্মদ | ১০ জুন ২০১৭, শনিবার, ২:৪২ | এক্সক্লুসিভ ]


ডিমের হালি ১২ টাকা! প্রতি পিছ ৩ টাকা! তবুও মিলছেনা ক্রেতা। এ যেনো শায়েস্থা খাঁর আমল। গ্রামের এখানে-সেখানে ডিমের স্তুপ। অপেক্ষা ক্রেতার! তবে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় ভাটা পড়েছে পাইকারী বাজারে।  ডিম নিয়ে বিপাকে খামারিরা। অবিশ্বাস্য মনে হলেও কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় বিভিন্ন লেয়ার খামারে গিয়ে এমন অবস্থাই দেখা গেছে। পানির দামে বিক্রি হচ্ছে  মুরগির ডিম।

পাকুন্দিয়া উপজেলার মঠখোলা গ্রামের প্রবাস ফেরত যুবক নূরুজ্জামান বাবু। কয়েক বছর ধরে নিজের বাড়িতে তৈরি করেছেন লেয়ার মুরগির খামার। এতে লাভও আসছিল ভালো। কিন্তু হঠৎ করেই যেনো তার মন উঠে যায় খামার থেকে। তার খামারে ১৫ হাজার মুরগি। ডিমের দাম পড়ে যাওয়ায় অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। ডিমের দাম পড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে তাকে। তাই খামারের দিকে খুব একটা খেয়াল নেই। কর্মচারিরা খামার পরিচর্যা করছিলেন।

বাবু জানান, এক দিকে মুরগির খাবারের দাম বাড়ছে, অপর দিকে কমছে ডিমের দাম। এক’শ ডিম বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৯০ টাকায়। প্রতি হালির ডিমের দাম পড়ছে ১২ টাকার চেয়েও কম। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে প্রতিদিন তার খামারে ১২ হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘একটি ডিম উৎপাদনে খরচ পড়ে ৫ টাকা। অথচ বিক্রি করতে হচ্ছে তিন টাকায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে ঘরবাড়ি বিক্রি করা ছাড়া কোন উপায় নেই।’

পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের মজিদপুর গ্রামের মো. শামসুদ্দিন এবার নতুন  খামার দিয়েছেন। তার খামারে এক হাজার ২’শ মুরগি। এখন পর্যন্ত খামারে তার খরচ হয়েছে ৯ লাখ টাকা। কিন্তু ডিম বিক্রি করতে পেরেছেন মাত্র ৩০ হাজার টাকা। উৎপাদনের শুরুতেই তিনি লোকসানের মুখে পড়েছেন। কত টাকা লোকসান গুনতে হবে এ চিন্তায় অস্থির কৃষক শামসুদ্দিন।

একই এলাকার সোহেল মিয়া খামারে তিনটি সেডে ৫ হাজার মুরগি পালন করছে। অনেক দিন ধরেই তিনি লেয়ার মুরগি পালন করে আসছেন। গত বছরও ডিম বিক্রি করে তার লাভ হয়েছে ১০ লাখ টাকা। কিন্তু এবারের অবস্থা একেবারেই ভিন্ন। সোহেল মিয়া বলেন, ‘ এক বস্তা খাবার কিনতে হচ্ছে ১৬৬৫ টাকায়। আর এক’শ ডিমের দাম ৩০০ টাকা। ডিমের দাম কম হলেও মুরগিকেতো আর খাবার কম দেয়া যাচ্ছেনা। তাই প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে ১২ হাচার টাকা।’ হঠাৎ করে ডিমের দাম কমে যাওয়ায় ডিম ব্যবসায়িদের কারসাজি আছে বলে মনে করেন তিনি। সোহেল মিয়া জানান, এবার তার ১৫ লাখ টাকা লোকসান হলে বলে আশংকা করছেন তিনি।

পাকুন্দিয়া ছাড়াও কিশোরগঞ্জের অন্যান্য উপজেলাতেও ডিমের পাইকারী বাজারে ধ্বস নেমেছে। এক দিকে মুরগির খাবারের দাম বাড়ছে, অপরদিকে কমছে ডিমের দাম। এতে করে লোকসানের মুখে পড়ছে খামারিদের। এ দিকে খামার থেকে নাম মাত্র মূল্যে ডিম বিক্রি হলেও বাজার থেকে ডিম কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। খামারিরা জানান, লেয়ার মুরগির খাবারের দাম বাড়ছে। আর কমছে ডিমের দাম। এ অবস্থায় প্রতিদিন লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। ডিম যেনো খামারিদের গলার কাটা হয়ে দেখা দিয়েছে।

এ দিকে খামার থেকে পানির দামে বিক্রি হলেও বাজার থেকে সাধারণ মানুষকে ডিম কিনতে হচ্ছে ২৫ টাকা হালি। ডিম ব্যবসায়িদের কারসাজিতে এমনি হচ্ছে বলে মনে করছে স্থাণীয় প্রাণীসম্পদ বিভাগ। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী জানান, ‘ ব্যবসায়িরা খামার থেকে কম দামে ডিম কিনলেও কয়েক হাত ঘুরে খুচরা বাজারে মানুষকে ডিম কিনতে হচ্ছে ডাবল দামে। এটা ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটের কাজ। এতে করে লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।’ সরাসরি বাজারে ডিম বিক্রি করার সুযোগ পেলে প্রাšিতক চাষিরা লাভবান হবেন।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জে লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে প্রায় ২০ হাজার। এসব খামারে প্রতি বছর উৎপাদন হয় ৭০ কোটি ডিম। আর এ জেলায় ডিমের চাহিদা রয়েছে বছরে ৩১ কোটি। বাকি ডিম অন্যান্য জেলায় পাঠানো হয়। এসব খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজার হাজার মানুষের। জেলার সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে মুরগির খাবারের দাম কমিয়ে ডিমের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়ার দাবি খামারিদের।



[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ি নয়। মতামত একান্তই পাঠকের নিজস্ব। এর সকল দায়ভার বর্তায় মতামত প্রদানকারীর]

এ বিভাগের আরও খবর



















প্রধান সম্পাদক: আশরাফুল ইসলাম

সম্পাদক: সিম্মী আহাম্মেদ

সেগুনবাগিচা, গৌরাঙ্গবাজার

কিশোরগঞ্জ-২৩০০

মোবাইল: +৮৮০ ১৮১৯ ৮৯১০৮৮

ইমেইল: kishoreganjnews247@gmail.com

©All rights reserve www.kishoreganjnews.com