কিশোরগঞ্জ নিউজ :: কিশোরগঞ্জকে জানার সুবর্ণ জানালা


প্রেমের ফাঁদে ফেলে কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ শেষে পরিবারের নৃশংসতা

 মুহাম্মাদ শাহ্ আলম, স্টাফ রিপোর্টার, কুলিয়ারচর | ৯ জুন ২০১৮, শনিবার, ২:১০ | কুলিয়ারচর 


কুলিয়ারচরে প্রেমের ফাঁদ আর বিয়ের প্রলোভনে এক কলেজ ছাত্রীকে আটক রেখে উপর্যুপরি ধর্ষণ ও নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় কলেজছাত্রী বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ অভিযোগ দাখিল করেছেন।

গত ২৯ মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ দায়ের করা এই পিটিশন মোকদ্দমায় (নং- ২৬/১৮) ধর্ষক ফারুক মিয়াকে প্রধান করে ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুসন্ধানপূর্বক সত্যতা যাচাই করে সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ওসি কুলিয়ারচর থানাকে নির্দেশ প্রদান করেন। কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নান্নু মোল্লা পিটিশনটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য থানার এসআই মো. আব্দুর রহমানকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কুলিয়ারচর উপজেলার পীরপুর দক্ষিণ পাড়া গ্রামের মৃত রমিজ উদ্দিনের লম্পট ছেলে  মো. ফারুক মিয়া (২৫) গত ১৪ মে বিকালে পাশ্ববর্তী বাজিতপুর উপজেলার দক্ষিণ পিরিজপুর গ্রামের হতদরিদ্র দিন মজুরের মেয়ে উত্তর পিরিজপুর বিএম কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে প্রেমের ফাঁদ ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের মরুদ্বীপ ৭১’ স্বাধীনতা পার্কে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর  সেখানকার একটি নির্জন স্থানে যৌন নির্যাতনসহ ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে কলেজছাত্রীকে ফুসলিয়ে কৌশলে ওই দিন রাতে ফারুক মিয়া তার নিজের বাড়ীর পূর্ব ভিটের একটি বিল্ডিং ঘরে নিয়ে তুলে। পরদিন সকালে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে রাতভর একাধিকবার উপর্যুপরি ধর্ষণ করে।

বিষয়টি পরদিন ১৫ মে সকালে জানাজানি হলে মেয়েটিকে ঘরে একা রেখে লম্পট ফারুক কৌশলে পালিয়ে যায়। ফারুককে ঘরে না পেয়ে ধর্ষিতা কলেজছাত্রী এ ঘটনা ফারুকের পরিবারের সদস্যদের জানালে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি গোপন রাখার জন্য কলেজ ছাত্রীর উপর চাপ সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে তারা কলেজছাত্রীকে তাদের বাড়ীর একটি ঘরে আটকে রেখে দিনভর নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যার চেষ্টা করে এবং কলেজছাত্রীর বাম হাতে ধারালো ছোরা দিয়ে একাধিক স্থানে কেটে লবণ লাগিয়ে দেয়।

সংবাদ পেয়ে কুলিয়ারচর থানা পুলিশ রাত ১১টার দিকে রক্তাক্ত গুরুতর আহত অবস্থায় ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে রাত পৌনে ১২টার দিকে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে নিয়ে ক্ষত স্থানে সেলাইসহ চিকিৎসা করিয়ে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন ১৬ মে দুপুরে ফারুকের বড় ভাই মো. মোস্তাক মিয়া থানা পুলিশের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে কলেজ ছাত্রীর বড় বোন থানায় একটি অঙ্গীকার নামা ও একটি জিম্মানামায় স্বাক্ষর দিয়ে কলেজছাত্রীকে থানা থেকে বাড়ীতে নিয়ে যায়। এরপর থেকে প্রভাবশালী একটি মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে আসছে।

নৃশংস নির্যাতনের শিকার ধর্ষিতা কলেজ ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, আমি অন্য উপজেলার মেয়ে হওয়ার কারণে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ফারুকের পরিবারের পক্ষ থেকে তার ছোট ভাই মো. মাসুদ রানাকে দিয়ে ঘটনার পরদিন ১৫ মে কুলিয়ারচর থানায় আমার নামে একটি মিথ্যা সাধারন ডায়েরী নং-৫৯৫ দায়ের করে এবং থানা পুলিশ আমাকে ফারুকের বাড়ী থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সময় মাসুদ রানা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত থাকার সুবাদে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ও পুলিশকে ম্যানেজ করে হাসপাতালের পুলিশ কেইস ডায়েরীতে মিথ্যা তথ্য লিপিবদ্ধ করিয়ে হাতের ক্ষত স্থানে সেলাই করিয়েছে।

ধর্ষিতা  ও তার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, মামলা তুলে নেওয়াসহ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য অভিযুক্তরা একটি প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে তাদের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে চাপ সৃষ্টি করে আসছে। এছাড়া তারা থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে ধর্ষিতা ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ফারুক মিয়ার মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলিয়ারচর থানার এস আই মো. আব্দুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওই কলেজ ছাত্রীকে ফারুকের বাড়ী থেকে উদ্ধারের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি তদন্তে যা পাওয়া যাবে, সে মতেই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।


[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ি নয়। মতামত একান্তই পাঠকের নিজস্ব। এর সকল দায়ভার বর্তায় মতামত প্রদানকারীর]

এ বিভাগের আরও খবর