কিশোরগঞ্জ নিউজ :: কিশোরগঞ্জকে জানার সুবর্ণ জানালা


বাবা-মা পেল পুকুর পাড়ে ফেলে রাখা শিশুটি

 নূর মোহাম্মদ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ৫:৪৬ | বিশেষ সংবাদ 


আনুমানিক ৫ দিন বয়সী নবজাতক শিশুটিকে ফেলে রাখা হয়েছিল, একটি পুকুরের পাড়ে নির্জন স্থানে! কান্না শুনে আশপাশের লোকজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।

জন্মদাতা বাবা-মায়ের কাছে হয়তো ফেলনা আর অসম্মানের মনে হয়েছিল শিশুটিকে। হয়তো কাজ করছিলো সমাজ আর লোকলজ্জার ভয়! এমন পৈচাশিকতা মানুষই দেখিয়েছিল! তবে রাতের আধাঁরে কুড়িয়ে পাওয়া সেই শিশুটির স্থান মিলেছে মানুষেরই ঘরেই!

বিত্তবান এক দম্পতির ঘরে পরম মমতায় বেড়ে উঠছে ওই শিশুটি। তাদের কাছে এ যেনো সাত রাজার ধন! অমন ফুটফুটে সন্তান পেয়ে ওই পরিবারে এখন বইছে খুশির বন্যা। শিশুটির নাম রাখা হয়েছে ‘মিহিরিমা’।

গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে বাজিতপুর উপজেলার ভাগলপুরে অবস্থিত জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের পেছনে স্থানীয় বাসিন্দা নারায়ণের বাড়ির পারিবারিক পুকুরের পাড়ে একটি শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা। শিশুটিকে অন্ধকারে মাটিতে ফেলে রাখা অবস্থায় উদ্ধার করে এলাকাবাসী। খবর দেয়া হয় পুলিশে।

খবর পেয়ে বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান মজুমদার পিপিএম স্থানীয় সমাজ সেবা অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন। সমাজ সেবা বিভাগের উদ্যোগে উদ্ধার হওয়া শিশুটিকে রাখা হয় স্থানীয় এক ব্যত্তির তত্ত্বাবধানে।

বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দেশ-বিদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। অনেকে শিশুটিকে দত্তক নেয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। শিশুটিকে পাওয়ার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরে লিখিত আবেদন করেন ৪ জন। অবশেষে ঢাকায় বসবাসরত এক নি:সন্তান দম্পতির কাছে দত্তক দেয়া হয় মায়াবি চেহারার অধিকারি শিশুটিকে।

বাজিতপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বাবুল মিয়া জানান, শিশুটিকে  দত্তক নেয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকে আগ্রহ দেখায়। এমনকি লন্ডন থেকে ফোন করে তাকে দত্তক নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।

তিনি জানান, গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি উপজেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত মতে ঢাকার বনানী এলাকায় বসবাসরত বাজিতপুরের এক বিত্তবান ব্যক্তির কাছে শিশুটিকে দত্তক দেয়া হয়েছে। একটি বহুজাতিক বেসরকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ওই ব্যক্তির কোন সন্তান নেই। তাই নি:সন্তান ওই দম্পতি শিশুটিকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। ওই পরিবারে এখন আনন্দের যেনো সীমা নেই। মেয়ে শিশুটির নাম রাখা হয়েছে ‘মিহিরিমা’। তবে শিশুটির নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নাম পরিচয় প্রকাশ করতে চায়নি দত্তক নেয়া পরিবারেরর লোকজন।

জেলা সমাজসেবা অদিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান জানান, শিশু আইন-২০১৪ অনুযায়ি উপজেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ি শিশুটিকে ওই পেশাজীবীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।

বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের সভাপতি ফারুক আহমেদ জানান, সভার সিদ্ধান্ত মতে ৩’শ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা করে শিশুটিকে দত্তক দেয়া হয়। দত্তক নেয়া পরিবার শিশুটিকে ঠিকমতো লালন-পালন করছে কিনা, চুক্তির শর্ত পালন করা হচ্ছে কিনা- সেটি দেখার জন্য উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের প্রোভিশন অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন: ফুটফুটে এই শিশুটিকে ফেলে রাখা হয় পুকুর পাড়ে!


[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ি নয়। মতামত একান্তই পাঠকের নিজস্ব। এর সকল দায়ভার বর্তায় মতামত প্রদানকারীর]

এ বিভাগের আরও খবর