কিশোরগঞ্জ নিউজ :: কিশোরগঞ্জকে জানার সুবর্ণ জানালা


শোক-শ্রদ্ধায় শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় শহীদদের স্মরণ

 স্টাফ রিপোর্টার | ৭ জুলাই ২০২৩, শুক্রবার, ৬:৪৩ | বিশেষ সংবাদ 


কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহের চেকপোস্টে ঈদুল ফিতরের দিন জঙ্গি হামলায় পুলিশের দুইজন সদস্য এবং এলাকার একজন গৃহবধূ নিহত হন। দেশের ইতিহাসে গুলশানের হলি আর্টিজানে অস্ত্রধারী জঙ্গিদের ভয়াবহ হামলার ৬ দিন পর ২০১৬ সালের ৭ জুলাই শোলাকিয়ায় এই রক্তাক্ত হামলার ঘটনা ঘটেছিল।

এ ঘটনার সাত বছর পূর্তির দিনে শোক ও শ্রদ্ধায় জঙ্গি হামলায় আত্মোৎসর্গকারী দুই বীর পুলিশ সদস্য আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলাম এবং গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিককে স্মরণ করা হয়েছে।

তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার (৭ জুলাই) সকালে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সকাল ১০টায় ঘটনাস্থল চরশোলাকিয়া সবুজবাগ মোড়ে স্থাপিত আত্মোৎসর্গকারী বীর পুলিশ সদস্য আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম (বার), সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এম এ আফজল, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান প্রমুখ।

এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. মোস্তাক সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ নূরে আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সপুার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মো. আলআমিন হোসাইন, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনতোষ বিশ্বাস, কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মাদ দাউদ. পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শ্যামল মিয়া প্রমুখসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা ও শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।

পরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম (বার) অন্যদের নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের সময় নিজ বাসায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ঝর্ণা রাণী ভৌমিকের বাসভবনে যান এবং সেখানে ঝর্ণা রাণী ভৌমিকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় অন্যদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বকুল, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিলকিছ বেগম এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা নিবেদনে অংশ নেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম (বার) নিহত গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিকের স্বামী গৌরাঙ্গ ভৌমিকের স্বামীর সাথে কথা বলেন ও পরিবারের খোঁজখবর নেন।

এছাড়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নিহত দুইজন পুলিশ সদস্যের পরিবারকে বিশেষ উপহার সামগ্রী পাঠানো হয়।

অন্যদিকে জেলার সবগুলো থানা মসজিদ ও পুলিশ লাইন্স মসজিদে জুমআর নামাজের পর বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাত ও জামাতের ইমাম মুফতি ফরিদ উদ্দিন মাসউদের ওপর হামলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঈদগাহে যাওয়ার পথে চেকপোস্টে বাধা পেয়ে দুই জঙ্গি চাপাতি, বোমা এবং পিস্তল নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়। জঙ্গিরা চাপাতি দিয়ে পুলিশের দুই সদস্য কনস্টেবল আনসারুল হক ও কনস্টেবল জহিরুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করে।

খবর পেয়ে অন্য পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে গিয়ে তাদের প্রতিরোধ করলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কুমিল্লার যুবক জঙ্গি আবির রহমান (২৩) গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এছাড়া নিজ বাসায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিক (৪০) নিহত হয়। এ সময় আহত হন আরও ১২ পুলিশ সদস্য।

বন্দুকযুদ্ধের একপর্যায়ে র‌্যাবের হাতে বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অপর জঙ্গি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এলাকার শফিউল ইসলাম (২২) ধরা পড়ে। শফিউল পরবর্তী সময়ে এনকাউন্টারে মারা যায়। কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম তারাপাশা এলাকার জাহিদুল হক তানিম (২৬) নামে এক যুবকও ঘটনাস্থল থেকে আটক হয়।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। অভিযোগপত্রে মোট ২৪ জন আসামির নামাল্লেখ করা হলেও ১৯ জন আসামি দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।

২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর জীবিত পাঁচ আসামি জঙ্গি নেতা বড় মিজান, রাজিব গান্ধী, সোহেল মাহফুজ, আনোয়ার হোসেন ও জাহিদুল হক তানিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।


[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ি নয়। মতামত একান্তই পাঠকের নিজস্ব। এর সকল দায়ভার বর্তায় মতামত প্রদানকারীর]

এ বিভাগের আরও খবর