কিশোরগঞ্জ নিউজ :: কিশোরগঞ্জকে জানার সুবর্ণ জানালা


বাজিতপুরে কীটনাশক ছাড়া সবজি চাষে লাভবান কৃষক

 মোহাম্মদ খলিলুর রহমান, বাজিতপুর | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, রবিবার, ৪:০৪ | বাজিতপুর 


কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়া পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। এতে কৃষক কম খরচে ফসল উৎপাদন করছে, মানুষ পাচ্ছে বিষমুক্ত শাকসবজি। রক্ষা হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও।

বাজিতপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নকে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আইপিএম মডেল ইউনিয়ন হিসেবে ঘোষণা করে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য কৃষকদের সকল উপকরণ ও প্রশিক্ষণ দেয়।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে চলতি রবি মৌসুমে ফলোআপ হিসেবে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ স্টিকি ট্র্যাপ, মালচিং পেপার, জৈব বালাইনাশক, নেট হাউজ ও পলিনেট হাউজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাজিতপুর উপজেলার দক্ষিণ পিরিজপুর ব্লকে বাজে গাঁও গ্রামের বিশাল এলাকা জুড়ে বিভিন্ন রকম শাক-শবজি চাষ করছে কৃষকেরা।

জমির ভেতর কিছুটা দূরত্বে পর পর বসানো আছে হলুদ ফাঁদ ও ফেরোমেন ফাঁদ। ফেরোমেন ফাঁদ দুইটি লাঠি দিয়ে বালতির মতো দেখতে উপরে ঢাকনা লাগানো অবস্থায় বসানো আছে। এর নিচ দিকে ছোট্ট একটি ছিদ্র রাখা হয়েছে। তাতে ফসলের ক্ষতিকর ছোট বড় অনেক পোকা মরে পড়ে আছে।

একটু দূরে দেখা যায় উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের কৃষকদের পরামর্শ দিতে।

কৃষক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আগে আমরা মনগড়া কীটনাশক ব্যবহার করতাম। জৈব সার ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ আঠালো ও মালচিং পেপার সম্পর্কে জানতাম না। এবার বাজিতপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে রাসায়নিক কীটনাশক ছাড়া জৈব বালাই পদ্ধতিতে ২০ শতাংশ জমিতে বেগুন চাষ করেছি।

এ পদ্ধতির মাধ্যমে সবজি চাষ করে অল্প খরচে বেশি ফসল উৎপাদন করতে পাচ্ছি। ফসলের গুণগত মানও ভালো হয়। ফলে দাম পাওয়া যায় বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পিরিজপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল আলম বলেন, একসময় দেশে খাদ্য অভাব ছিল তখন মানুষ অর্ধাহারে অনাহারে দিন পার করতেন। তখন আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল যেভাবেই হোক আমাদেরকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। ইতোমধ্যে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।

কিন্তু বর্তমানে নিরাপদ খাদ্যের অভাব রয়েছে। তাই পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় নিরাপদ খাদ্য কিভাবে উৎপাদন করতে হয় তা কৃষকদের অতি দোরগোড়ায় পৌঁছে কৃষকদের হাতে কলমে দেখিয়ে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে।

বাজিতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আশরাফুল আলম বলেন, সনাতন পদ্ধতির বিপরীতে পরিবেশবান্ধব সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ স্টিকি ট্র্যাপ, জৈব বালাইনাশক প্রযুক্তির ব্যবহার করে কৃষকদের ফসল উৎপাদন ব্যয় কমছে। পাশাপাশি সবজি ক্রেতারা পাচ্ছেন বিষমুক্ত সবজি। একই সাথে রক্ষা পাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। নতুন এই পদ্ধতি চাষাবাদ এ অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। প্রকল্পভুক্ত চাষীদের পাশাপাশি উৎসাহিত হচ্ছেন এলাকার বিপুল সংখ্যক চাষী।

তিনি জানান, বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদনে সার্বক্ষণিক কৃষক-কৃষাণীদের পাশে থেকে নানারকম পরামর্শ দিয়ে আসছে উপজেলা কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। পরিবেশ সুরক্ষা, সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে উপজেলা কৃষি অফিস এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।


[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ি নয়। মতামত একান্তই পাঠকের নিজস্ব। এর সকল দায়ভার বর্তায় মতামত প্রদানকারীর]

এ বিভাগের আরও খবর