তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে স্বাগতিক জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। সোমবার (১৫ নভেম্বর) সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ৭ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। এতে তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ নারী দল।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচেও বোলিং জাদু দেখালেন বাংলাদেশ নারী দলের বোলার নাহিদা আক্তার। তার বোলিং তোপে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন জিম্বাবুয়ে নারী দলের ব্যাটাররা।
৫০ ওভারের মধ্যে ২৭.২ ওভারেই ৭২ রানে অলআউট হয়ে গেছে জিম্বাবুয়ে। জিম্বাবুয়ের ১০ উইকেটের মধ্যে নাহিদা আক্তার একাই নিয়েছেন ৫ উইকেট। ১০ ওভার বল করে মাত্র ২১ রানের খরচায় ক্যারিয়ার সেরা এ বোলিং করেন নাহিদা। এর মধ্যে ৪টি ছিল মেডেন ওভার।
জিম্বাবুয়ের ইনিংস শেষে নাহিদার বোলিং ফিগার ১০-৪-২১-৫।
সোমবার (১৫ নভেম্বর) বুলাওয়ের কুইন্স স্পোর্টস ক্লাব স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। জিম্বাবুয়ের দেয়া ৭৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ১৯০ বল বাকি রেখে সহজেই লক্ষ্য স্পর্শ করে বাংলাদেশ। এর আগে টসে জিতে জিম্বাবুয়ে নারী দল প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয়।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচেই বোলিংয়ে দারুণ কৃতিত্ব দেখালেন নাহিদা আক্তার। প্রথম ম্যাচে ৫.২ ওভারে মাত্র ২ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন নাহিদা আক্তার। তার মধ্যে আবার ৩টিই ছিল মেডেন ওভার। যা ওয়ানডেতে বাংলাদেশ নারী দলের হয়ে সবচেয়ে কিপটে বোলিংয়ের রেকর্ড। গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জিম্বাবুয়েকে হারায়।
প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন কিশোরগঞ্জের মেয়ে টাইগ্রেস বোলার নাহিদা আক্তার। গত ১৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে বাংলাদেশ ৯ উইকেটে হারিয়েছে জিম্বাবুয়েকে।
এদিন ৯.৪ ওভার বল করে ৩০ রানের খরচায় দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট লাভ করেন নাহিদা। এর মধ্যে ছিল দুটি মেডেন ওভার। ইকোনমি গড় ৩.১০।
সোমবার (১৫ নভেম্বর) ৫ উইকেট নেয়ার মাধ্যমে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারকে আরো সমৃদ্ধ করেছেন নাহিদা আক্তার। এই সিরিজের তিন ম্যাচ থেকেই নাহিদা মোট ১১টি উইকেট শিকার করেছেন।
ফলে নাহিদা আক্তারের ১৮ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তার শিকার এখন ২৪ উইকেট। সেরা বোলিং ৫/২১।
নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলতে এখন জিম্বাবুয়ে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দল। এই টিমের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে বিশ্বকাপ মিশনে রয়েছেন টাইগ্রেস বোলার নাহিদা আক্তার।
আগামী ২১ নভেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচ খেলবেন বাংলাদেশের মেয়েরা।
তার আগে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ে নারী দলের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে সিরিজটি খেলেছে বাংলাদেশ দল।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় নাহিদা আক্তারের। এরপর থেকে নাহিদা আক্তার বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হয়ে নিয়মিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আসছেন।
নাহিদা আক্তারের বোলিং জাদুতে ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর এস এ গেমস ক্রিকেটে ইতিহাস গড়ে স্বর্ণ জয় করে বাংলাদেশ নারী দল।
এর আগে ২০১৮ সালের জুনে নাহিদার মিতব্যয়ী বোলিং এ এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় পায় বাংলাদেশ। যা ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম কোন টুর্নামেন্ট শিরোপা।
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অন্যতম বোলার হিসেবে আস্থা আর নির্ভরতার এক অনন্য নাম এখন নাহিদা আক্তার।
অন্যদিকে নাহিদা আক্তারের ৪১ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ১৩.৪২ গড়ে তার শিকার ৫০ উইকেট। ইকোনমি গড় ৪.৯৮। সেরা বোলিং ৪/১১।
২০২০ সালের ২ মার্চ নিজের ২১তম জন্মদিনে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৫০ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন নাহিদা আক্তার।
এছাড়া টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বেও নাহিদার পারফর্মেন্স ছিল নজরকাড়া।
বামহাতি অর্থোডক্স বোলার নাহিদা আক্তারের জন্ম ২০০০ সালের ২ মার্চ কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার দ্বাড়িয়াকান্দি গ্রামে। তার বাবার নাম মো. হামজু ভূঁইয়া। বেড়ে ওঠা রাজধানী ঢাকায়।
২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে করাচীতে অনুষ্ঠিত খেলায় আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয় নাহিদা আক্তারের। ওই সময় মহিলাদের আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট দলে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় ছিলেন নাহিদা আক্তার। তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর ২১২ দিন।