নিকলী গণহত্যায় ৩৫ ব্যক্তি শহীদ হন

[ খাইরুল মোমেন স্বপন, নিকলী | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১২:০০ | মুক্তিযুদ্ধ ]

আজ ২১ সেপ্টেম্বর নিকলী গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে উপজেলার কেন্দ্রিয় শ্মশানখলায় হিন্দু পরিবারের ৩৫ ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলো পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা। এটি উপজেলার সবচেয়ে বড় গণহত্যার ঘটনা।

এলাকাবাসী ও গণহত্যায় শহীদ পরিবার সূত্রে জানা যায়,  ১৯৭১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ছিল বাংলা সালের ৬ আশি^ন। উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের মিস্ত্রি পাড়া থেকে পাক মেজর দোররানী ও রাজাকার কমান্ডার (তৎকালীন থানার ওসি) হোসেন আলীর নির্দেশে স্থানীয় দালাল শান্তি কমিটি ও সেই সময়কার দামপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব আলী ওরফে ট্যাকার বাপের নেতৃতে কিশোর, যুবক, বৃদ্ধসহ ৩৯ জনকে নিরাপত্তা কার্ড দেয়ার নাম করে ২টি নৌকায় তোলা হয়। সিরাজ, সানাইসহ কয়েক রাজাকারের তত্ত্বাবধানে তাদেরকে নিয়ে আসা হয় রাজাকার ক্যাম্প নিকলী থানায়।

এদের মধ্যে বাদল সূত্রধর, বাদল বর্মন, সুনু বর্মন, গোপাল সূত্রধর বয়সে কিশোর হওয়ায় রাখা হয় থানা লকআপে। বাকিদের পিঠমোড়া বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে চালানো হয় নির্যাতন। ক্ষণে ক্ষণে লাঠি আর বেয়নেটের খোঁচাখুঁচি চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। পাকমেজর দোররানীর (নিকলী জিসিপি উচ্চ বিদ্যালয় পাক ঘাঁটিতে অবস্থানরত) সাথে ওয়ারলেসযোগে সিদ্ধান্ত নেয় হোসেন আলী। রাত আনুমানিক ৮টার দিকে ওই ৩৫ গ্রামবাসীকে থানার নিকটস্থ সোয়াইজনী নদীর পশ্চিমপাড়ের শ্মাশানখলা ঘাটে সাঁরিবদ্ধ দাঁড় করিয়ে চালানো হয় ব্রাস ফায়ার। রাজাকারদের সহযোগিতায় গুলিবিদ্ধ ৩৫ জনকেই হলুই (মাছ গাঁথার বড় সুঁই) করে নিয়ে যাওয়া হয় ধুবলারচর নামক হাওরে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে বর্ষার পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয় সবাইকে।

কামিনী বর্মন নামে একজন কাকতালীয়ভাবে বেঁচে যান। ভোর বেলায় ছেড়ে দেয়া হয় থানা লকআপের ৪ কিশোরকে। ততক্ষণে হাওরের জলে ভেসে গেছে তাদের মা-কাকীর সিঁদুর। বিধ্বস্ত কিশোরদের চোখে প্রতিশোধের আগুন। উপায়ন্তর না দেখে তারা যোগ দেন এলাকায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে। রাজাকার ঘাঁটির পথঘাট চেনানোসহ নানা কাজে সহযোগিতা করেন দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত।

এ বিভাগের আরও খবর

বিজয়ের দিনেও কিশোরগঞ্জ ছিল অবরুদ্ধ

পরিত্যক্ত ঘরে দুঃসহ জীবন মুক্তিযোদ্ধা আলী মাষ্টারের

করিমগঞ্জ মুক্ত দিবস পালিত

লাশ না পাওয়ায় ডামি মৃতদেহ দাহ করেন স্বজনেরা

শহীদ আশফাকুস সামাদ বীরউত্তমের শাহাদাতবার্ষিকী পালিত

শোক-শ্রদ্ধায় ‘বড়ইতলা গণহত্যা’ দিবস পালিত

বরইতলায় পাকবাহিনী একসঙ্গে ৩৬৫ জনকে হত্যা করে

নিকলী গণহত্যায় ৩৫ ব্যক্তি শহীদ হন

একাত্তরে তাড়াইলের প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন আহাম্মদ হত্যার তদন্ত শুরু

কানকাটি গণহত্যা দিবস পালিত

কানকাটি গণহত্যায় একই পরিবারের ছয় শহীদ

‘এ দেশে কোন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা থাকবে না’

ধুবাজোড়া গণহত্যায় এক পরিবারের ১৯ জন শহীদ হন

একটি বটগাছের আত্মকথা

ভয়রা ট্রাজেডি